মহাকাশকে ঘিরে উল্লেখযোগ্য কিছু অভিযান

মহাকাশকে নিয়ে মানুষের কৌতুহল অনেক আগে থেকেই। তারই রেশ ধরে সম্পন্ন হয়েছে বহু মহাকাশ যাত্রা। এ সকল অভিযান কেবলই আমাদের কৌতুহল ও রোমাঞ্চপ্রিয়তার বহিঃপ্রকাশ। তবে মহাশূন্যের এই সকল অভিযান আমদেরকে অনেক গুলো গুরুত্বপূর্ণ অভিজ্ঞতা লাভের সুযোগ করে দিয়েছে যা আমাদের জ্ঞানের পরিধিকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দেশ থেকে মহাকাশে উৎক্ষেপিত হয়েছে নানান কৃত্রিম উপগ্রহ। মহাশূন্য যাত্রার প্রথম পদক্ষেপটির সূচনা হয়েছে ১৯৫৭ সালের ৪ঠা অক্টোবর। এই যাত্রার সূচনা করে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন। তারা মহাশূন্যে স্পুটনিক-১ (Sputnik-1) নামক কৃত্রিম উপগ্রহটি উৎক্ষেপণ করতে সক্ষম হয় যার আকার ছিলো অনেকটা ভলিবলের মতো।  স্পুটনিক শব্দের অর্থ ভ্রমণ সঙ্গী।




জীবন্ত প্রাণী বহনকারী প্রথম মহাশূন্যযানটি ছিল স্পুটনিক-২ (Sputnik-2)। সোভিয়েত ইউনিয়ন নির্মিত এ মহাশূন্যযানের যাত্রী ছিলো লাইকা (Laika) নামের একটি কুকুর।


মানুষ নিয়ে মহাশূন্যে প্রথম যাত্রা করে ভস্টক-১ (Vostoc-1)। এই যাত্রার দ্বারা প্রথম মহাশূন্যচারী  মানুষ হিসেবে খ্যাতি লাভ করেন সোভিয়েত ইউনিয়নের ইউরি গ্যাগারিন (Yuri Gagarin)। ১৯৬১ সালের ১২ই এপ্রিল তিনি পৃথিবীকে পরিক্রমণ করেন। এর দুই বছর পর ১৯৬৩ সালের ৪ঠা ডিসেম্বর প্রথম মহিলা হিসেবে মহাশূন্যে পা রাখেন ভেলানটিনা তেরেসকোভা (Valentina Tereshkova)। তাকে বহনকারী উপগ্রহটি ছিলো স্টক-৬ (Stock-6) যার নির্মাতাও ছিলেন সোভিয়েত ইউনিয়ন।


১৯৬১ সালের ৫ই মে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের প্রথম সফল মনুষ্যবাহী মহাশূন্যযান মার্কারি-রেডস্টোন-৩ (Mercury-redstone-3) কে মহাশূন্যে উৎক্ষেপণ করতে সক্ষম হয়। এই মহাশূন্যযানের যাত্রী ছিলেন মার্কিন মহাকাশচারী  অ্যালান শেফার্ড (Alan shepard)। এশিয়া মহাদেশের প্রথম মনুষ্যবাহী মহাশূন্যযান শেনঝিউ-৫ (Shenzhou-5)। চীনের এই উপগ্রহটি ২০০৩ সালের ১৫ই অক্টোবর ইয়াং লিওই (Yang Liwei) কে নিয়ে মহাশূন্যে পাড়ি জমায়।





দক্ষিণ এশিয়ার হয়ে প্রথম সফল মহাশূন্যযান উৎক্ষেপণের কৃতিত্ব অর্জন করে ভারত। ১৯৮০ সালে তাদের তৈরি কৃত্রিম উপগ্রহ রোহিনি-১ (Rohini-1) মহাকাশ ছুতে সক্ষম হয়। ২০০৮ সালের ১৪ই নভেম্বর প্রথম ভারতীয় চন্দ্রযান হিসেবে চন্দ্রযান-১ (Chandrayan-1) সফলভাবে চাঁদে অবতরণ করে। তবে এর আগেই প্রথম মানুষ হিসেবে চন্দ্রপৃষ্ঠে পা রাখেন নীল আর্মস্ট্রং (Neil Armstrong)। তিনি ১৯৬৯ সালের ২০ই জুন চাঁদে অবতরণ করেন।


বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহারের জন্য পাঠানো প্রথম যোগাযোগ উপগ্রহটি ছিলো ইনটেলসেট-১ (Intelset-1)। পরবর্তীতে উপগ্রহটির নামকরণ করা হয় Early Bird। এছাড়াও যোগাযোগ রক্ষার্থে প্রেরিত উল্লেখযোগ্য আরো কয়েকটি  উপগ্রহ হচ্ছে স্কোর (Score), ভেনেরা-৩ (Venera-3), ল্যান্ডসেট-১ (Land set)। এ সকল গ্রহ তাদের সয়ংক্রিয়তার মাধ্যমে যোগাযোগ রক্ষা করে যাচ্ছে।


মঙ্গলগ্রহের উদ্দেশ্যে পাঠানো প্রথম মার্কিন মহাশূন্য অনুসন্ধানী যানটি ছিলো ভাইকিং (Viking)। এরকম আরেকটি মার্কিন নভোযান হচ্ছে পাথ ফাইন্ডার (Pathfinder)। পাথ ফাইন্ডারের সাথে পাঠানো রোবটের নাম ছিলো  'সোজার্নার'। রোবটটিকে পাঠানো হয়েছিল মঙ্গলগ্রহের শিলারাশি পরীক্ষা ও চিত্র প্রেরণের জন্য।



মহাশূন্যে বিভিন্ন চিত্রগ্রহণের জন্য ১৯৯০ সালের ২৪শে এপ্রিল হাবল (Hubble) নামক একটি টেলিস্কোপ পৃথিবীর কক্ষপথে স্থাপিত হয়। এই টেলিস্কোপটি নাসা (NASA) এবং ইসা (ESA) এর যৌথ উদ্যোগে নির্মিত হয়। এই হাবল টেলিস্কোপটির দ্বারা মহাশূন্যে প্রেরিত সকল উপগ্রহের চিত্রগ্রহণ করা হয়।


আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্র (ISS):
ISS (International Space Station) পৃথিবীর নিম্নকক্ষে স্থাপিত একটি কৃত্রিম উপগ্রহ। এটিই এ যাবৎকালের সর্ববৃহৎ মহাকাশ স্টেশন। এটির আকার এতো বড় যে, এটি পৃথিবী থেকে খালি চোখে দৃশ্যমান হতে পারে। এই কৃত্রিম উপগ্রহটির ওজন ৩৬৯,৯১৪ কেজি। ১৯৯৮-২০১১ খ্রিষ্টাব্দ অবধি NASA, ESA, RKA,  JAXA ও CSA এর তত্বাবধায়নে এই উপগ্রহটি নির্মিত হয়।





বিভিন্ন সময়ে সংঘটিত এ সকল অভিযান যেমনি আমদেরকে দিয়েছে মহাকাশ সম্পর্কে নানান অজানা তথ্য তেমনিভাবে এর দ্বারা বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করতে সক্ষম হয়েছে নানান গ্রহ, উপগ্রহ, নক্ষত্র, জোতিষ্ক। এমনকি কিছু কিছু গ্রহে মানব অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার মতো সম্ভাবনাও লক্ষ করেছেন বিজ্ঞানীরা।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

দেজা ভ্যু কী এবং কেন হয়?

ফেসবুক ডেটিং সার্ভিস